সৃষ্টির আখর
ন ন্দি তা ভট্টা চা র্য
সৃষ্টি কোনকালেই ঠিকআমাদের মত ছিল না। সেই স্কুল জীবন থেকে ও কারো তোয়াক্কা করার ধার ধারতো না।পড়াশোনা নিয়েও ওর তেমন মাথা ব্যথা ছিল না। মাথাটি ছিল নারকেলের মত শাঁসে ভরা।পরিস্কার। ওর মত ইঁচড়ে পক্ক বন্ধু আর এ জীবনে পেয়েছি কি না সন্দেহ। সবাই যে দিকেইহাঁটবে ও ঠিক তার উল্টো পথে। যত রকম নষ্টামির মাস্টার। চেহারাটিও ছিল জম্পেশ। তাইনিয়ে ওনার এত উর্দুম কুর্দুম। পাতলা ঠোঁট, টানা টানা চোখ, গোল পানপানা মুখ,ছিপছিপে। এই ছিল তার যত কর্মকাণ্ডের পুঁজি। আমরা তাই ওকে একটু হ্যাটা করতাম। আমাদেরআবার পাঁচজনের গুছুনি, নিপাট ভাল মেয়ের দল। পড়াশোনায় প্রথম দশ জনের মধ্যে। নিজেদেরমধ্যেই ভাগ বাটোয়ারা করে নিতাম পজিসন। ফার্স্ট বেঞ্চটি আমাদের বাধা। পেছনের বেঞ্চেকারা বসে জানার কখন চেষ্টা করি না। প্রত্যেকেরই বাড়ির অবস্থা ভাল। ভবিষ্যতে কিছুএকটা হতেই হবে। এই মানে আর কী খাপে খাপ। আর সৃষ্টির ছিল পেছনের বেঞ্চটি বাঁধা।ওখান থেকেই ও ওর সাম্রাজ্য চালাত। আর কোন সময় হয়ত বলতাম, তোকে জানিস কেউ পছন্দ করেনা, না দিদিমনি-না স্যার। রাগ-টাগ ও কথায় কথায় অভিমান ওর কোনকালেই ছিল না। ওগুলোআমাদের সম্পত্তি। হেসে জবাব দিত, তাতে কি আইল গেল, মজা তো করতে পারতাসি। তরা থাকগাআহ্লাদি হইয়া, মুখ ভেঙ্গিয়ে বলত ‘ভাল মেয়ে’। কো এড স্কুলে পড়া। সুতরাং ক্লাস নাইনথেকেই শুরু হয়ে যেত লাইন মারামারি। আর সৃষ্টির তো এগুলোই মনের মত বিষয়। একদিন হঠাৎলাফাতে লাফাতে এসে বলল - ওরে ওই বাচ্চুটা না খুব পেছন ঘুরছে দিয়ে দেব নাকি একটুলাই। ভাব একবার। তার পছন্দ হল কি না, তায় বয়েস হয়েছে কি এগুলোতে মন দেবার! কেবোঝাবে! একসঙ্গে চার-পাঁচ জনেক ফ্লার্ট মারাটা ওর কাছে কোন ব্যাপার ছিল না। আমরাআবার একে বিশ্বাসী। তায় নেকু-পুষু, বাবারে এই বয়েসে প্রেম। মাধব, মাধব! পড়াশোনা নিয়েব্যস্ত থাকি। আর বিকেলে স্কুলের পর বন্ধুদের সঙ্গে একটু আড্ডা। ব্যাস সন্ধ্যের আগেবাড়ি ঢোকা, তারপর ঘাড় গুঁজে পড়া। মায়ের আদেশ মান্য করা ইত্যাদি ইত্যাদি। আহা আহামেয়ে আমরা। যদি বলতাম, আচ্ছা এতগুলো ছেলের সঙ্গে তুই যে এই বয়েসে এ রকম করিস তোরকিছু মনে হয় না? সবাইকে ঠকাচ্ছিস। কি রকম কষ্ট লাগে যে। সব কয়টার লাইগ্যাই কষ্টহয়। কি রকম চাইয়া থাকে! ঝোলো ঠ্যালা! তারপর সেই গা জ্বালানো হাসি। বাঙ্গাল ভাষায়কথা বলত সবসময়।
হঠাৎ একদিন স্কুলে এসে দেখি সৃষ্টি খুব উত্তেজিত। বাড়িতেসত্যনারায়ণ পুজো, ওর মা বলেছেন আমাদের নিয়ে যেতে। আমার যে ওর প্রতি একটু দৌর্বল্যছিল সেটা সবাই জানত। তাই ও অপেক্ষা করছিল আমি আসার। কারণ আর সবাই যে ওকে তুড়ি মেরেউড়িয়ে দেবে ও সেটা জানত। ততদিনে আমরা জেনে গেছি ওর বেশ একটা গভীর গভীর কোন ব্যাপারচলছে। সে আসবে শুনছি, একটু দেখার লোভ ও হল। গরু জোয়ালে জুতবে কি না দেখেই আসি।সত্যনারায়ণ পুজোতো একটা ছুতো। আমরা পাঁচজন বল্লাম, চ’ ঘুরেই আসি কি আর হবে। টিফিনেচলে যাব আবার টিফিন শেষ হওয়ার আগেই ফিরে আসব। কেউ টেরটিও পাবে না। ও যে দিদিমণিস্যারদের সুনজরে নেই সে তো আমাদের খুব ভাল করে জানা। তাই আমরা একটু ভয়েই থাকি।চুপিচুপি টিফিনে কেটে পড়লাম। ওর বাড়ি আমাদের স্কুলের একদম কাছেই। পৌঁছেই তাড়ালাগাতে লাগলাম, প্রসাদ তাড়াতাড়ি দে, আধ ঘণ্টার মধ্যে স্কুলে পৌঁছতে হবে। দেখলামতেনাকেও। বেশ বয়েস, লোক, ছেলে কোথায়! মন খারাপ হয়ে গেল আমাদের। আমরা সেদিন নামদিয়ে দিলাম ‘ফিস’। কোন মানে নেই নামের। পছন্দ হয়নি বলে বোধহয়। আমরা বেরোবার জন্যেউসখুস করছি সৃষ্টি বলল, চল তোদের একটা মজার জিনিস দেখাব। আবার কি পাক খাচ্ছে ওরমাথায় কে জানে! কোন পোকা কিলবিল করে উঠল। নিয়ে গেল পাশেই একটা ঘরে। ছোট ঘুপচিঅন্ধকার স্টোর রুম। সেখানে ডাই করে জিনিস রাখা। এখানে কোন্ স্বর্গ ও আমাদের দেখাবেবুঝতে পারলাম না। আমাদের ছিলা টান টান। সৃষ্টির মা একটু উদাসিন ধরনের মানুষ। আরছেলে মেয়ে ও সংসার নিয়ে মাথা ঘামাবার মত মানুষ তিনি নন। খেয়ালই করলেন না মেয়েসবাইকে নিয়ে কোথায় গেল। ওই নোংরা ডাই থেকে দেখি টেনে বার করল একটি বই। বা বা ওরআবার পড়ায় এত মন কবে থেকে হল! বই তো আমাদের প্রাণের জিনিস। পাতার পর পাতা ছবিদেখাতে লাগল ও। ভিরমি খাবার যোগাড় আমাদের। বুক শুকিয়ে গেল। চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসবে।ভীষণ জল তেষ্টা পাচ্ছে। হাত পা থর থর করে কাঁপছে। ছুটে বেরিয়ে আমরা এক দৌড়েরাস্তায়। সৃষ্টি নির্বিকার, কি খুব ভাল মেয়ে, না! দিলাম তো জাত মেরে। খ্যাক খ্যাককরে হাসছে। তাড়াতাড়ি স্কুলে ফিরে এলাম আমরা। ঘেমে নেয়ে অস্থির। কেউ কারও সঙ্গে কথাবলছি না। সকলের দৃষ্টি এড়িয়ে ক্লাসে ঢুকে পড়লাম। কয়েকদিন চলল আমাদের মধ্যে গুজ গুজফুস ফুস। ভুতে ভর করার মত আমাদের অবস্থা।
ইতিমধ্যে মাধ্যমিকপরীক্ষা চলে এল। পাস করার পর কে কোথায় ছিটকে পড়লাম। আমাদের মধ্যে চন্দ্রিমা চলেগেল দার্জিলিং। ফোনে কথা হলে সবার কথাই জিজ্ঞেস করা হয়। এর ওর তার খোঁজ নি। কারণদার্জিলিং থাকার সুবাদে অনেকের সঙ্গে দেখা হয় ওর।
হঠাৎ একদিন চন্দ্রিমারফোন, এ যে তেনার সঙ্গে দেখা হল, দার্জিলিং বেড়াতে এয়েচেন! এই নে, ফোন নং দিতেবলেছে তোকে! দেখিস সাবধানে এবার কিন্তু সত্যি ভুত দেখিয়ে ছাড়বে!
(প্রকাশিত -- আগুনমুখা
ডিসেম্বর
ন ন্দি তা ভট্টা চা র্য
সৃষ্টি কোনকালেই ঠিকআমাদের মত ছিল না। সেই স্কুল জীবন থেকে ও কারো তোয়াক্কা করার ধার ধারতো না।পড়াশোনা নিয়েও ওর তেমন মাথা ব্যথা ছিল না। মাথাটি ছিল নারকেলের মত শাঁসে ভরা।পরিস্কার। ওর মত ইঁচড়ে পক্ক বন্ধু আর এ জীবনে পেয়েছি কি না সন্দেহ। সবাই যে দিকেইহাঁটবে ও ঠিক তার উল্টো পথে। যত রকম নষ্টামির মাস্টার। চেহারাটিও ছিল জম্পেশ। তাইনিয়ে ওনার এত উর্দুম কুর্দুম। পাতলা ঠোঁট, টানা টানা চোখ, গোল পানপানা মুখ,ছিপছিপে। এই ছিল তার যত কর্মকাণ্ডের পুঁজি। আমরা তাই ওকে একটু হ্যাটা করতাম। আমাদেরআবার পাঁচজনের গুছুনি, নিপাট ভাল মেয়ের দল। পড়াশোনায় প্রথম দশ জনের মধ্যে। নিজেদেরমধ্যেই ভাগ বাটোয়ারা করে নিতাম পজিসন। ফার্স্ট বেঞ্চটি আমাদের বাধা। পেছনের বেঞ্চেকারা বসে জানার কখন চেষ্টা করি না। প্রত্যেকেরই বাড়ির অবস্থা ভাল। ভবিষ্যতে কিছুএকটা হতেই হবে। এই মানে আর কী খাপে খাপ। আর সৃষ্টির ছিল পেছনের বেঞ্চটি বাঁধা।ওখান থেকেই ও ওর সাম্রাজ্য চালাত। আর কোন সময় হয়ত বলতাম, তোকে জানিস কেউ পছন্দ করেনা, না দিদিমনি-না স্যার। রাগ-টাগ ও কথায় কথায় অভিমান ওর কোনকালেই ছিল না। ওগুলোআমাদের সম্পত্তি। হেসে জবাব দিত, তাতে কি আইল গেল, মজা তো করতে পারতাসি। তরা থাকগাআহ্লাদি হইয়া, মুখ ভেঙ্গিয়ে বলত ‘ভাল মেয়ে’। কো এড স্কুলে পড়া। সুতরাং ক্লাস নাইনথেকেই শুরু হয়ে যেত লাইন মারামারি। আর সৃষ্টির তো এগুলোই মনের মত বিষয়। একদিন হঠাৎলাফাতে লাফাতে এসে বলল - ওরে ওই বাচ্চুটা না খুব পেছন ঘুরছে দিয়ে দেব নাকি একটুলাই। ভাব একবার। তার পছন্দ হল কি না, তায় বয়েস হয়েছে কি এগুলোতে মন দেবার! কেবোঝাবে! একসঙ্গে চার-পাঁচ জনেক ফ্লার্ট মারাটা ওর কাছে কোন ব্যাপার ছিল না। আমরাআবার একে বিশ্বাসী। তায় নেকু-পুষু, বাবারে এই বয়েসে প্রেম। মাধব, মাধব! পড়াশোনা নিয়েব্যস্ত থাকি। আর বিকেলে স্কুলের পর বন্ধুদের সঙ্গে একটু আড্ডা। ব্যাস সন্ধ্যের আগেবাড়ি ঢোকা, তারপর ঘাড় গুঁজে পড়া। মায়ের আদেশ মান্য করা ইত্যাদি ইত্যাদি। আহা আহামেয়ে আমরা। যদি বলতাম, আচ্ছা এতগুলো ছেলের সঙ্গে তুই যে এই বয়েসে এ রকম করিস তোরকিছু মনে হয় না? সবাইকে ঠকাচ্ছিস। কি রকম কষ্ট লাগে যে। সব কয়টার লাইগ্যাই কষ্টহয়। কি রকম চাইয়া থাকে! ঝোলো ঠ্যালা! তারপর সেই গা জ্বালানো হাসি। বাঙ্গাল ভাষায়কথা বলত সবসময়।
হঠাৎ একদিন স্কুলে এসে দেখি সৃষ্টি খুব উত্তেজিত। বাড়িতেসত্যনারায়ণ পুজো, ওর মা বলেছেন আমাদের নিয়ে যেতে। আমার যে ওর প্রতি একটু দৌর্বল্যছিল সেটা সবাই জানত। তাই ও অপেক্ষা করছিল আমি আসার। কারণ আর সবাই যে ওকে তুড়ি মেরেউড়িয়ে দেবে ও সেটা জানত। ততদিনে আমরা জেনে গেছি ওর বেশ একটা গভীর গভীর কোন ব্যাপারচলছে। সে আসবে শুনছি, একটু দেখার লোভ ও হল। গরু জোয়ালে জুতবে কি না দেখেই আসি।সত্যনারায়ণ পুজোতো একটা ছুতো। আমরা পাঁচজন বল্লাম, চ’ ঘুরেই আসি কি আর হবে। টিফিনেচলে যাব আবার টিফিন শেষ হওয়ার আগেই ফিরে আসব। কেউ টেরটিও পাবে না। ও যে দিদিমণিস্যারদের সুনজরে নেই সে তো আমাদের খুব ভাল করে জানা। তাই আমরা একটু ভয়েই থাকি।চুপিচুপি টিফিনে কেটে পড়লাম। ওর বাড়ি আমাদের স্কুলের একদম কাছেই। পৌঁছেই তাড়ালাগাতে লাগলাম, প্রসাদ তাড়াতাড়ি দে, আধ ঘণ্টার মধ্যে স্কুলে পৌঁছতে হবে। দেখলামতেনাকেও। বেশ বয়েস, লোক, ছেলে কোথায়! মন খারাপ হয়ে গেল আমাদের। আমরা সেদিন নামদিয়ে দিলাম ‘ফিস’। কোন মানে নেই নামের। পছন্দ হয়নি বলে বোধহয়। আমরা বেরোবার জন্যেউসখুস করছি সৃষ্টি বলল, চল তোদের একটা মজার জিনিস দেখাব। আবার কি পাক খাচ্ছে ওরমাথায় কে জানে! কোন পোকা কিলবিল করে উঠল। নিয়ে গেল পাশেই একটা ঘরে। ছোট ঘুপচিঅন্ধকার স্টোর রুম। সেখানে ডাই করে জিনিস রাখা। এখানে কোন্ স্বর্গ ও আমাদের দেখাবেবুঝতে পারলাম না। আমাদের ছিলা টান টান। সৃষ্টির মা একটু উদাসিন ধরনের মানুষ। আরছেলে মেয়ে ও সংসার নিয়ে মাথা ঘামাবার মত মানুষ তিনি নন। খেয়ালই করলেন না মেয়েসবাইকে নিয়ে কোথায় গেল। ওই নোংরা ডাই থেকে দেখি টেনে বার করল একটি বই। বা বা ওরআবার পড়ায় এত মন কবে থেকে হল! বই তো আমাদের প্রাণের জিনিস। পাতার পর পাতা ছবিদেখাতে লাগল ও। ভিরমি খাবার যোগাড় আমাদের। বুক শুকিয়ে গেল। চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসবে।ভীষণ জল তেষ্টা পাচ্ছে। হাত পা থর থর করে কাঁপছে। ছুটে বেরিয়ে আমরা এক দৌড়েরাস্তায়। সৃষ্টি নির্বিকার, কি খুব ভাল মেয়ে, না! দিলাম তো জাত মেরে। খ্যাক খ্যাককরে হাসছে। তাড়াতাড়ি স্কুলে ফিরে এলাম আমরা। ঘেমে নেয়ে অস্থির। কেউ কারও সঙ্গে কথাবলছি না। সকলের দৃষ্টি এড়িয়ে ক্লাসে ঢুকে পড়লাম। কয়েকদিন চলল আমাদের মধ্যে গুজ গুজফুস ফুস। ভুতে ভর করার মত আমাদের অবস্থা।
ইতিমধ্যে মাধ্যমিকপরীক্ষা চলে এল। পাস করার পর কে কোথায় ছিটকে পড়লাম। আমাদের মধ্যে চন্দ্রিমা চলেগেল দার্জিলিং। ফোনে কথা হলে সবার কথাই জিজ্ঞেস করা হয়। এর ওর তার খোঁজ নি। কারণদার্জিলিং থাকার সুবাদে অনেকের সঙ্গে দেখা হয় ওর।
হঠাৎ একদিন চন্দ্রিমারফোন, এ যে তেনার সঙ্গে দেখা হল, দার্জিলিং বেড়াতে এয়েচেন! এই নে, ফোন নং দিতেবলেছে তোকে! দেখিস সাবধানে এবার কিন্তু সত্যি ভুত দেখিয়ে ছাড়বে!
(প্রকাশিত -- আগুনমুখা
ডিসেম্বর