Friday 30 December 2011

সুফি কবি জালালুদ্দিন রুমির কবিতার অনুবাদ

আয়ুষ্কাল ~~
~~~~~~

একটি নাবিক শূন্য জীবন
ছদ্মবেশী মৃত্যু বা গভীর ঘুম।
দূষিত জল তোমার জন্যে বিষ
যে বিষ তোমার সত্বাকে শুদ্ধ করে, সে জল।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

Any Lifetime~~Mewlana Jalaluddin Rumi
~~~~~~~~~
Any lifetime that is spent without seeing the master
Is either death in disguise or a deep sleep.
The water that pollutes you is poison;
The poison that purifies you is water.

Saturday 3 December 2011

রেডিও রূপকথা ~


    রেডিও রূপকথা
 ~~~~~~~~~~~~
আজকাল মোবাইল দেখি আর আমার কেন জানি রেডিওর কথা মনে হয়। রাস্তায় চলতে চলতে কানে গোঁজা দুই সুতো, বুকের কাছে লকেটের ঝুলছে স্পিকার, হাতের মধ্যে সাত রাজার ধন মানিক । সারা দিনের সঙ্গী, এক মুহূর্ত হাতের কাছে না থাকলে দিন সুনসান, যেন সর্বস্বান্ত । তেমনি আমাদের ছোটবেলায় ছিল রেডিও ! আর ট্রানজিস্টার ! সকালে প্যাঁ প্যাঁ পে পে পে ,রবিশঙ্কর , তারপর বন্দেমাতরম । আমাদের ঘুম ভাঙ্গুক না ভাঙ্গুক সে হাজির , সূর্য ওঠার মত তারপর খবর পড়াখবর পড়ছি নীলিমা সান্যাল বা দেবদুলালা বন্দ্যো ,আর কত কত । আজ কানে বাজে সেই স্বর গুলো ! মনে হয় একটা মানুষ থিতু হয়ে যায় তার গলা দিয়ে । তার চেহারা,  অবয়ব ,সব ই যেন তার স্বরের মধ্যে ঢুকে  পরিচিতি তৈরি করে । মানুষগুলোকে ত কোনদিন দেখা হয়নি কিন্তু তাদের স্বরের বিস্তার মনের মধ্যে গেথে আছে । যাকগে , রেডিওর দখলদারি তো বড়দের হাতেই থাকত ।এই খবর রে ,এই খেলা রে ইত্যাদি । তারপর মায়েদের ছায়াছবির গান   ,শুক্রবারের নাটক ।আমাদের জন্য বরাদ্দ আর কততুকু ?  আমাদের ছোটবেলা শৃঙ্খলা ব্যাপারটি বড় জোরদার ছিল । রেডিওয় বাচ্চারা কি শুনবে ,সিনেমা কি দেখবে--তা বড় নির্দিষ্ট ছিল । আমাদের জন্য সিনেমা বরাদ্দ থাকত বীরেশ্বর  বিবেকানন্দ , সুভাষচন্দ্র ,মহাতীর্থ কালীঘাট । তেমনি রেডিওতেও কিছু কিছু অনুষ্ঠান শোনার অনুমতি থাকত না । হিন্দি গানশোনা , হিন্দি সিনেমা দেখা –দুটোই ছিল নিষিদ্ধ ফলের মত । আর যায় কোথা ! হিন্দি গানতো শুনতেই হবে ।  ছিল বিনাকা গীতমালা আর আমিন সায়ানির গলা। নিশির ডাকের মত । কত ছল ছুতো বার করতে হত । বিনাকা গীতমালার সময় যেন বাবা বাড়ি না থাকেন তার জন্য নিয়ত প্রার্থনা । জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখে নিশ্চিন্ত হয়েই মারফি  বেবির ঠোঁটে আঙ্গুল ছবি খানার দিকে তাকিয়ে খুশির জোয়ার । টকাস করে রেডিও অন করেই নিষিদ্ধ ফলে অবগাহন । কখন কখন পরিবেশ অনুকুল না হলে মানে বড়রা সব রয়ে গেছেন । কোন উপায় নেই, একখানা অঙ্ক খাতা নিয়ে সাঙ্ঘাতিক কঠিন মুখ করে রেডিওর টেবিলে বসে পড়া ! কি মনোযোগ অঙ্কে ! কানের কাছে একেবারে লো ভলিউমে নিষিদ্ধ ফল । অদ্ভুত এক আনন্দ !  এখন তো হিন্দিগানে ডুবে থাকলেও সেই আনন্দের সন্ধান আর মেলে না ।  গান শোনারও রকম ভেদ ছিল । ক্লাসিক্যাল ,রবীন্দ্রসংগীত , নজরুলগীতি –আমাদের তো সম্ভার রয়েছে । তারপর আর কি চাই ! এই ছিল বড়দের যুক্তি ।
                   মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধের সময়কার কথা আবছা মনে পড়ে । দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষ্য ইতিহাস রচনা করেছিল । একদা মাতৃভূমির টান ছাড়তে না পারা মানুষগুলো কি কাতর হয়ে সারাদিন রেডিও আকড়ে বসে থাকতেনএক একটা জায়গা মুক্তাঞ্চল হয়েছে শুনলে ওদের চোখে আলো  জ্বলে  উঠত । কোন জায়গার নাম শুনলে সেই জায়গাটা যে কত চেনা সেটা বোঝাবার জন্যে ব্যকুল হয়ে উঠতেন । কোথাও কি আশা ছিল আবার নিজের মাতৃভূমিতে নিজের ভিটে পাবার ?   সেই অসাধ্যসাধন করেছিল রেডিও ।  এক টানে একদা ফেলে আসা ভিটে মাটির দোর গোড়ায়   পৌছে দিয়েছিল সেইসব মানুষকে, যাদের মনের ভেতর কুল কুল করে বইত ফেলে আসা দেশ । আমারা সাক্ষি হিসেবে সব সময় সেই ফেলে আসা স্বপ্নের দেশের গল্প শুনতাম । আর আপ্লুত হয়ে তাকিয়ে থাকতাম উজ্জ্বল মুখগুলোর দিকে । এ দেশের সবই খারাপ ও দেশের সবই স্বপ্নময়, সোনায়মোড়া । আর সেই সময় যে গানের বন্যায় ভাসিয়েছিল রেডিও সে-ও এক ইতিহাস !  
তারপর তো এল ট্রানজিস্টারটেবিল থেকে ঠাই হল হাতে । দিব্যি ঘাড়ে, মাথায় ,বগলে চড়ে বেড়াতে লাগল । মোবাইল রেডিও । গান শোনা , খেলা দেখা ,যুদ্ধের খবর শোনা সব কিছুই হেটেচলে  বেড়িয়ে । ছায়ার মত চলেছে । তবে খেলার ধারা বিবরণীতে ট্রানজিস্টার রেডিওকে লাং মেরে যে মাঠ দখল করেছিল তা এখন চলছে । রেডিও এখন ইতিহাস ! এফ এম চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ! মোবাইল অবশ্য তার পুরান তান কিছুটা ধরে রাখার চেষ্টা করছে। তবে খেলার জগতে ট্রানজিসটার এখনও ব্যাটিং করে চলেছে !
জয় রেডিও মাইকি জয় ! জয় রেডিও বাবা কি জয় !       
              ~~~~~~~~~~~
          

Friday 18 November 2011

নাবান্নের ঘ্রান

নাবান্নের ঘ্রান~~
উৎসব সমারোহ শেষ ,চোখ পলক না
ফেলতেই সবুজের আসমান হেমন্তের মাঠ ,
যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজের সুখ মাখা,
হাত ধরে ছুটে চলা--আবার থামলেই মাঠে
সূর্যমুখী ফরমান,মাঠে তাঁত বোনে কে,
সবুজের জমিন পালটে হৈমন্তি আঁচলে
ক্ষেত মন বুটি,তিলে তিলে জেগে ওঠে
প্রান, মাঠ ভরে দুধ আসে ধানের বুকে,
সময়ের হাত ধরে শূন্য হয় মাঠ ,ধান
প্রান পেয়ে ভরে দেয় কৃষকের উঠান ,
সবুজ সোনার ক্ষন, নববধূ নবান্ন চন্দন
                                                                   ফোঁটায়, পা রাখে দুধ আলতায় গৃহস্থের
                                                                   আঙ্গিনায়। নবান্নের ঘ্রান ,প্রান পায় আহ্লাদি,
                                                                    সোহাগি অগ্রান ।
  ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~                                        

Wednesday 2 November 2011

প্রানের শহর~~~


ঝাপসা হয় পানবাজার অভার ব্রিজ,ভরলুমুখ,দিপর বিল,
কারবি গ্রাম, গোয়ালপাড়ার সূর্যাস্তের ব্রহ্মপুত্র,আমার
প্রানের শহর; বিধ্বস্ত হয়েছে তার চিত্রল মুখ ,ছবির মত
অমলকান্তি বাড়িগুলোর মুখ ঢেকেছে কর্পোরেট অশ্লীলতায় ,
উঠোনে দাঁড়ালে চোখ ছুঁয়ে যেত শরনিয়ার সাবলীল শরীর ;
কাহিলিপাড়া, জাপরিগগ,নিলাচল চোখ ঢেকেছে আঁচলে ,
চোখ হোচট খায় ধাবমান অতল তল ও বাজারের কৃত্রিম
আলোর ছলাকলায় ,ফ্লাইওভারের কার্নিশে মুখ ঘষে শহরের
বন্ধ্যা জীবন; হারিয়ে যায় স্মৃতির ক্যানভাসে এঁকে রাখা তুলির
বর্ণিল মেদুরতা ,সব শহরই আজ এক ছাঁচে ঢালা বৈচিত্র্যহীন
বেবাক নিথর শব;তবু ভালবাসি আমার প্রানের শহর ,তোর
লাইকেনহীন শরির থেকে আগ্রাসী আমি খুটে খাই অক্সিজেন মন।

Sunday 9 October 2011


 'Tomas Gösta Tranströmer (Swedish pronunciation: [ˈtʊːmas ˈjœsˈta ˈtrɑːnˈstrœmər]) (born 15 April 1931) is a Swedish writer, poet and translator, whose poetry has been translated into over 60 languages. Tranströmer is acclaimed as one of the most important Scandinavian writers since World War II. Critics have praised Tranströmer’s poems for their accessibility, even in translation; his poems capture the long Swedish winters, the rhythm of the seasons and the palpable, atmospheric beauty of nature. He was awarded the Nobel Prize for Literature in 2011.'
 TOMAS TRANSTOMER ~~ NOBEL PRIZE WINNER IN LITT. 2011.
 ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
April and Silence
Spring lies deserted.
The velvet-dark ditch
crawls by my side without reflections.
All that shines
are yellow flowers.
I’m carried in my shadow
like a violin in its black case.
The only thing I want to say
gleams out of reach
like the silver
in a pawnshop.
 এবারের নোবেলজয়ী কবি Tomas Transtromer কবিতার অনুবাদ~~
এপ্রিল ও নিস্তব্ধতা
~~~~~~~~~~
বসন্ত এলিয়ে আছে কেমন,একাকী।    
মখমল- রং নালী আমার পাশে পাশে
গুড়ি মেরে এগোয়,প্রতিফলন হীন।
সব উজ্জ্বলতাই শুষে
নিয়েছে হলুদফুল।
আমি আমার ছায়াকে বহন করছি
বেহালার কাল খাপে।
আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই
আমার সাথে আড়ি আলোর।
রূপো শুয়ে আছে
বন্ধকী দোকানে।
অনুবাদ~~নন্দিতা ভট্টাচার্য।

Friday 7 October 2011

আমার শহর

আমার শহর ~~~~~~~~

by Nandita Bhattacharjee on Friday, October 7, 2011 at 10:16am
শরীরের রসায়ন বিবস

হয়েছে চান্দ্র অমসৃণতায় --
তবুও বছরে কদিন ঘাড় ঘুরিয়ে
দাঁড়াস অলঙ্কারের বিপুল উদ্ভাসে -
যেন নির্বাক শূন্যতায় ঢেকেছে প্রত্যয় ।
 

ক্ষনিকের নিবিড় সংলাপে
ঢাকা পড়ে যায় কার ঘরে
কত কত ক্ষয় অবিলম্বে নিশ্চয় ।
 

কয়েকটাদিন জিরান নিয়ে
আবার শুরু হয় তোর
আকাল বোধন ।
আমার শহর

ইরম- তোকে মরম

ইরম- তোকে মরম    

শর্মিলা
ইরম
তোকে জানাই
মরম    মরম    মরম ।
 চারদিকে ধুম লেগেছে হৃদকমলে ।
আলোর বিলাপ,মানুষের উদভ্রান্ত উল্লাশ ,ময়ুর নৃত্য
তারমাঝে তোর মুখ মনে পড়ে
টিউবের অলঙ্কারে শোভিত
উজ্জ্বল এক দ্বীপমালা , নক্ষত্রখচিত
রোমাঞ্চিত ভ্রুযুগল  কত কথা বলে
তোর চোখের তারায় জ্বলে ওঠে লোকতাগ লেক।
 অপেক্ষা--
গঙ্গাজল সই তোর
আফস্পার অশনি সঙ্কেত , রক্তের দাগ মুছে
এক নরম প্রলেপ লাগাতে চাস মানুষের বুকে।
ওদিকে ডেসমণ্ড কলমে আঁকে তোর মন
বসে আছে অপার হয়ে কবে রজকিনি,
নিকষিত হেম জড়িয়ে নেবে সব
বিহ্বল  বিষাদের কথা ।
অপেক্ষার
আর এক নাম
শার্মিলা ইরম
মরম    মরম     মরম ।

ভাঙ্গা গড়ার সাতকাহন

ভাঙ্গা গড়ার সাতকাহন

by Nandita Bhattacharjee on Monday, October 3, 2011 at 10:13pm
ষষ্ঠীর সন্ধ্যে থেকেই মায়ের মন খারাপ,বলেন নি কিছুই তবুও যেন চোখের দিকে তাকালে ,গালের ভাঁজের কাপনে , সন্ধ্যেতে আনমনা হয়ে বসে থাকা সবই যেন মুখর হয়  মায়ের আজ মন কোথায় আনমনা হয়েছে ।তক্ষুনি দাদার ফোন এল ,"বিল্বষষ্ঠী করছ ,কাকিমা,আমাদের সব কেমন ছন্নছাড়া হয়ে গেল'যে জলটুকু সারাদিন চেষ্টা করে ধরে রাখা ছিল তা গড়িয়ে  পড়ল  বললেন ,'হ্যাঁ ,মনে মনে করছি। এই তো  উঠোনে বেল গাছের ডাল পোতা হয়েছে ।আমরা ছ 'জন জা ঘিরে বসেছি ।'আর কিছু বলা হল না ।
বাড়ীতে পুজো  হত । পুজো  থেকেও বেশি সারা পরিবারের মিলন মেলা ।সেখানে ধর্ম কতটুকু ছিল জানিনা। তাবে প্রবাসে থাকা বাড়ির ছেলেটি আসবে,  মেয়েরা  আসবে শশুরবাড়ি থেকে, পিসিরা  আসবেন । সকলে  এলেই    ছুটে ছুটে  বেরনো ,সে সকাল ,বা রাত দুপুরই হোক ।তারপর তো হই হই ।সকলের তদারকি। দিদিদের ফাই ফরমাশ খাটা ।বোনপো বোনঝি আমাদের  জিম্মায়। মায়েরা সারাক্ষন রান্নাঘরে ,আর আমাদের কপালে বকুনি।জাঁদরেল জ্যেঠামশাই চুন থেকে পান খসলেই  শব্দবান । বাবা তটস্থ । বেশ মজা লাগত ।দাদারাও  ভয়ে কাঁটা ।
বাড়িতে মূর্তি তৈরি হত। পুন্যদার সঙ্গে থাকতে হত ।পুন্য পাল বাড়ির পাশেই থাকত ।এটা দাও,ওটা দাও ।পুরান কাপড় দাও,তাতে মাটি লেপ দিয়ে কাঠামোর গায়ে আটকে দেয়া যাতে করে মাটি না ফাটে  । দেখতাম কি নিমগ্ন ভাবে খড় বাঁশের কাঠামো থেকে আস্তে আস্তে মাটি দেয়া,একটু একটু করে গোড়ে তোলা একটি অবয়ব ,শেষে ষষ্ঠীর দিন চক্ষুদানে গিয়ে শেষ  হত। পুন্যদাকে মনে হত জাদুকর। একটু একটু   করে মানস প্রতিমা রূপ দেয়া।
ষষ্ঠীর দিন বিকেলে  ঠাকুমা সকলের জন্য কেনা নতুন কাপড়ের ট্রাঙ্ক  নিয়ে বসতেন।একে একে  বড় থেকে ছোট সকলে যার যার প্রাপ্য  জামা কাপড় নিয়ে  যেতেন  । মায়েদের সকলের একই দামের  শাড়ী। বাচ্চাদের,ভাইদের একই রকম   ব্যবস্থা।  ভীষন  রকম সাম্যবাদ  মানা হত। বড়লোক  বাপের  মেয়ে বা ছেলে হলেই দামী জামা কাপড় পাবে সেটি হবার জো ছিল ন।
সপ্তমীর সকাল শুরু হত বাড়ির ছোট ছেলেদের ঘুম থেকে তুলে ফুল তুলতে পাঠান দিয়ে । ভোর চারটেতে উঠতে   হতো। সকালের আলো ফুটতেই ফুলের বোঝা নিয়ে সবাই ফিরল । ডালায় সবরকমের ফুল। এবার এগুলোকে গুছিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের   ,মেয়েদের।সাজিয়ে রাখা ভাগ ভাগ  করে ।তারপর মালা গাথা।তিরিশ চল্লিশখানা মালা গাথতে হত। এর মধ্যে সকলে যে যার মত বিভিন্ন রকমের কাজ খুঁজে নিত।কারোকে বলতে হত না । এক অদ্ভুত শৃঙ্খলা ।দুর্গাঘরের কাজ  বড়দের তদারকিতে হত।
বাড়ির বা বাইরে থেকে আসা বয়স্ক মহিলারা গীত গাইতে বসে যেতেন । একেবারে দুর্গার আগমন, জাগানি, বিল্ববরন প্রতিটি পর্যায়ের গান ।  মধ্যে মধ্যে অঞ্জলি ইত্যাদি নিয়ম কানুন চলছে । দুপুরের পরিবেশনের দায়িত্ব পড়ত ছেলেদের ওপর ।তার মধ্যে  আত্মীয় স্বজনদের আসা যাওয়া খুনসুটি  । যারা হয়ত সারা বছরে আসতে পারতেন না তারাও একবার ঢুঁ মেরে  যেতেন । এই পুজোর সুবাদে  অনেকের সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়া ,অনেকের সঙ্গে নতুন করে পরিচয় হওয়া ।এমনকি দু চারটে বিয়ের সম্বন্ধ ,পাত্রি দেখাও ঘটে যেত ।  বাড়িতেই সব বয়েসের সঙ্গি জুটে  যেত ।তাই জায়গায় জায়গায় আড্ডা  জমত সন্ধ্যের পর। দেখা যেত গোল গোল হয়ে এক এক ঘরে এক দল সমবয়স্কদের মজলিশ চলছে। যদিও মা ,জ্যেঠিমা ,কাকিমারা সেই রাত বারটায় রান্না ঘর থেকে ছুটি   পেতেন। তাদের আড্ডাখানা ছিল রান্নাঘর ।কি আনন্দ, হাসি ,কলরব। হাতে হাতে কাজ করে   যাওয়া ।কোন  ক্ষোভ  নেই , আক্ষেপ নেই, অনাবিল আনন্দ, মাহামিলন ঘটেছে ।  তিন দিন ধরে এই নিরলস কর্মকাণ্ড চলেছে ।
দশমীর দিন এল।যেন বাড়ির মেয়েটি পিত্রালয় থেকে শ্বশুরঘর যাবে । মায়েরা এই তিনদিন নতুন কাপড় পরার সময় পাননি ।সেদিন পরলেন ।মেয়েকে যাত্রা করালেন চোখের জলে ।  মায়ের ঘর শূন্য মেয়ের যাত্রা । ট্রাকে   তোলা হল প্রতিমাকে ।জ্যেঠামনি সুর ধরলেন,
                                                 মারে ভাসাইয়া জলে
                                                    কি ধন লইয়া যাইমু ঘরে
                                                         ঘরে গিয়া মা বলিব
                                                                কারে গো ,ও  মা ।
                                                        হিমালয়ের যত নারী
                                                          তারা কান্দে  গৌরি গৌরি
                                                                 কান্দিয়া কান্দিয়া
                                                                        ধরণী লুটায় গো ,ও মা।

তাই মা আজ ভাঙ্গা যৌথপরিবারের স্মৃতিচারনায় চোখ ভাসান ।খুঁজে বেড়ান মাহামিলনের সোপানগুলো । সোনাঝরা  দিনগুলোয় ঝাপ  দিয়ে খোঁজেন চেনা মুখ  । আর বিড়ম্বিত হয়  ষষ্ঠীর বিকেল।
                                                                        ঃঃঃঃঃঃঃ
· · · Share · Delete

    • Anupam Das Sharma দৃশ্যায়িত হলো যেন। এমন নির্ভেজাল শারদ আনন্দ আজ গল্পগাথা। প্রায় বিলুপ্ত যৌথ পরিবারের মতই ।
      October 3 at 10:19pm · · 1 person
    • Nandita Bhattacharjee ঠিক বলেছ অনুপম কত সাধারন অথচ কত অসাধারন ছিল তার আনন্দ,,,,,
      October 3 at 10:22pm · · 2 people
    • Anupam Das Sharma আমি খুব অভাববোধ করি। আমাদের যৌথ পরিবার কালের গ্রাসে পরমানু। পড়ে বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠলো। কি অফুরান আনন্দ গমগম করতো সে সময় !!
      October 3 at 10:26pm · · 1 person
    • Nandita Bhattacharjee vishon sotyi,,,ajkalkar bacchader jonyo sotyi kosto hoi.6 mash boyesh thekeo oneke creche thake.ki vayanok din elo.
      October 3 at 10:28pm · · 1 person
    • Anupam Das Sharma Thik tai.. Bachhagulo jantrik hoye jachhe. Magojastro ar toiri hobe na...
      October 3 at 10:29pm · · 1 person
    • Debabrata Acharjee দক্ষিণ ভারতের কোন এক প্রান্তে, ফ্লাট বাড়ীর এই লিভিং রোমে বসে আমি ঠিক বুঝতে পারছি উনার দুঃক্ষটা। ভাঙ্গা গড়ার সাতকাহনে আমরা হারিয়ে ফেলেছি অনেক কিছু...
      Tuesday at 12:56am · · 2 people
    • Nandita Bhattacharjee thik bolecho debabroto,,,,amra chutchi,,,,
      Tuesday at 12:57am ·
    • Debabrata Acharjee কোথায় যে ছুটছি সেটা কি আমরা জানি? শুধু ছুটেই চলেছি।
      Tuesday at 1:00am ·
    • Debabrata Acharjee মাঝে মাঝে বাউল হতে ইচ্ছে করে..।
      Tuesday at 1:01am · · 2 people
    • Nandita Bhattacharjee thik jotro totro bichoron kora ,,,,mon mele diya jekhane khushi beriiye pora,,,,,,
      Tuesday at 1:02am · · 1 person
    • Chandrani Purkayastha thik..amar o tai mone hoy... nijer aim in life niye chut te chutte aj janina kuthay amar gontobyo.. ek mechanical jibon ki amar gontyobyo hote pare? tai bhabi.. na.. sei jibon ami chai na... tahole keno chutchi.....othocho..abar amar swopno gulo amake tariye tariye nije chole sei odbhut gontobyer dike.....amara Bisorjon natoker raja hoye uthchi na to????????????????
      Tuesday at 9:34am · · 1 person
    • Nandita Bhattacharjee ei tanaporen niyei to amader jibon,,,ei pure pure chola,,,
      Tuesday at 9:35am · · 1 person
    • Alok Biswas bah! phoner ringtonei to nore uthlo bishnna , tumi katha bole, deke uthle kakimake. sundar cchabi eakeccho nandita.
      Tuesday at 9:36am · · 1 person
    • Nandita Bhattacharjee thik alok,,,khub miss kori barir pujo ar joutho paribar,,,,,,
      Tuesday at 9:40am · ·


শর্তহীন কই

by Nandita Bhattacharjee on Monday, October 3, 2011 at 12:10pm
আবার তুই আগের
মত হবি যদি কথা
দিস, তবেই কিন্তু
বসা যেতে পারে
অলিন্দে ,বোঝাপড়ার
খেরোরখাতা হাতে--
সময় দেব, চুরি
গেছে যতখানি ।
আবার ভাসবে
সকাল উঁকি দিয়ে
 জোড়াখাঁচার পায়--
বিকেলটাকেও রাখব
বেঁধে উড়ান পাখনায়---
শর্তহীন সুখে ডাক
দিয়েছে মন, দেখি
তাতে পা দিয়ে
জল নাচে কেমন।  

সনেট-২ বাতিঘর

নেট-২ বাতিঘর

 হঠাত এক অনিমিখ ত্রস্ত নাবিক

কথা হয়ে ডেকে ওঠে মেঘ জাগতিক

বাতিঘর জ্বলে ওঠে বালুকাবেলায়
ডেকে যায় বিহ্বল সিগাল অবেলায়।
ক্রমশ চারপাশ তার রহস্য আঁধার
ছায়া ছায়া কাল ধোঁয়াশার আশ
কুয়াশায় ছায়াবৃত ঢাকে মুখ তার
নিরবচ্ছিন্ন অস্ফুট অন্বেষণে গুঢ়তার বাস।


রহস্যের অবিরাম অশরীরী অবগাহন
ছায়াবৃত গুঢ় অন্ধকার দ্যুতিময় যখন
বাতিঘর দূর দুরগত আবছায়ায়
সামুদ্রিক ঝড় ছাপ রেখে যায় ।
বাতায়নে চোখ বোজে দাখিনা বাতাস

Wednesday 28 September 2011

স্বপ্নসখা


স্বপ্ন  মানে  চলকে হাওয়ায়    বানভাসি
স্বপ্ন  মানে   সূর্যচোখে          চোখরাখি
স্বপ্ন  মানে  চাঁদেরমনের       বাঁধভাঙ্গি
স্বপ্ন মানে   বৃষ্টিসুখে           ঝমঝমি
স্বপ্ন মানে   অজানপথে        দিইপাড়ি
স্বপ্ন মানে   গহীনগাঙ্গে        ডুবমারি
স্বপ্ন  মানে   বিরানপথের      ঘুমকাড়ি
স্বপ্ন মানে   নিদাঘবেলায়      ফুলতুলি
স্বপ্ন মানে   পাহাড়  চড়ে       দুখমাগি
স্বপ্ন মানে    দীর্ঘপথে           চলহাটি
স্বপ্ন  মানে   মনমাঝিতে         বৈঠাবাই
স্বপ্ন মানে    হৃদয়মাঝে         হাতরাখি।
by Nandita Bhattacharjee on Wednesday, September 28, 2011 at 8:43pm

Tuesday 27 September 2011

  • মীরা দেব বর্মণ- একটি তারা, মেঘে ঢাকা !

    By Nandita Bhattacharjee · Last edited last Wednesday · Edit Doc · Delete
                          ‘নিটোল পায়ে রিনিক ঝিনিক
                         পায়েলখানি বাজে ।
                         মাদল বাজে সেই সংকেতে
                          কালো মেয়ে নাচে ।
                         পাগলপারা চাঁদের আলো
                         নাচের তালে মেশে।। ‘

    ‘নিটোল পায়ে রিনিক ঝিনিক পায়েল খানি বাজে’ – গানটিতে কালো মেয়ের ,  শ্যামা মায়ের ‘নিটোল পায়ের’ ভাবনা  কোণ কবি ভাবতে পারেন সেটা নিয়ে বেশ ভাবনায় পড়ে গিয়েছিলাম ।কেমন কবি মায়ের পবিত্র পা নিয়ে এমন জাগাতিক কল্পানায় মাততে পারেন। সমস্ত গানের  কথার মধ্যে একটি জাগাতিক মাদকতা।পাগলপারা আবিলতা। romanticism. এমন আধুনিক ভাবনা আমাদের ভক্তিমুলক গানের মধ্যে খুব কমই পাওয়া যায়।এক বন্ধুর  শরনাপন্ন হলাম  ।গান বাজনার যথেষ্ট খবর রাখে ।বলল শচিন কর্তার  স্ত্রী –মীরা দেব বর্মণের হইতে পারে ।মীরা দেব বর্মণ ? গান লিখতেন নাকি? কই সেভাবে ত শুনিনি । কই কখনও তো   সেটা নিয়ে মাতামাতি হয়নি!প্রচার নেই কোনও! তার সমসাময়িক সকল গীতিকারদের কথা বেশ সগৌরবে শোনা যায় । তবে মীরা দেববর্মণের নামটি  ধুলোয় চাপা পড়ে রইল কেন?  প্রছন্ন অগৌরবে? সে যে এক মহা খটকা !!
    খুঁজতে খুঁজতে পেলাম  মীরা দেব বর্মণের এক নিকট আত্মীয়ের সরব কথা ,’korta was born genius,but Meera played an important role behind preserving his tunes by weaving them to-gether in notetions.Otherwise most of gems would have been lost.’
    মীরা দেব বর্মণ যে শুধু তাঁর স্বামী শচীন দেব বর্মণের গানের নোটেশন  সংরক্ষনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন তাই নয়। স্বামী ও পুত্রের চরম উৎকর্ষে  পৌঁছে দেয়ার মাপকাঠি  নির্দ্দিষ্ট করেছিলেন । অবশ্যই নিজেকে প্রচারের আলোয় না নিয়ে এসে । থেকেছেন আড়ালে ।
    অসামান্য সঙ্গীতের বোধ ও শিক্ষা তাঁর ছিল ।তিনি ছিলেন একাধারে গীতিকার ,সঙ্গীতশিল্পী  ও  নৃত্যশিল্পী। প্রতিভা নিয়ে জন্মেছিলেন ,সেই সঙ্গে যুগের তুলনায় সঠিকভাবে তালিমও পেয়েছিলেন। কেবলমাত্র শচীন দেব বর্মণের স্ত্রী বা রাহুল দেব বর্মণের মা ছিলেন কি তিনি? ‘she was a gem’  শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তুখোড় জ্ঞান সম্পন্ন গায়িকা ,নৃত্যশিল্পী ,রবীন্দ্রসংগীতেও সমান দক্ষতা,গানের কথাকার হিসেবে আধুনিক মনষ্কতা ,শব্দের  ব্যবহার , মাটির কাছাকাছি  থাকার  প্রবনতা,  অবাক হতে হয় ; assistant music director – হিসেবে ও চমক দেয়ার মত সুরের বিভা ছিল তার । শচীন দেব বর্মণের যে গান গুলোর সুরের আবেশে মাতাল হই ও নিয়ত গুন গুন করি—সে গুলোর অনেক সুর ই মীরা  দেববর্মণের সহায়তায় তৈরি হয়েছে ।
    জন্মেছিলেন তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্থানের(এখন বাংলাদেশ) কুমিল্লা জেলায়।  দাদু ও দিদিমার বাড়ীতে জন্ম থেকেই  থাকা পারিবারিক অসুবিধার কারনে। দাদু রায় বাহাদুর কমলনাথ দাশগুপ্ত ছিলেন ঢাকা হাইকোর্ট-এর চিফ জাস্টিস। তারপর কলকাতার সাউথ এন্ডে বসবাস শুরু করেন দাদু দিদিমার সঙ্গে। সেখানে  শুরু হয় পড়াশুনো সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গীত এর তালিম। দাদু দিদিমার বাড়ীতে বিদ্যালয় শিক্ষা ও সঙ্গীত শিক্ষা সমানতালে চলে।দাদু রায় বাহাদুর কমলনাথ  দাশগুপ্ত অত্যন্ত দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন ।নাতনীর সঙ্গীত শিক্ষার যথেষ্ট আয়োজন করেছিলেন । সঙ্গীত গুরু ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম নিয়েছেন; কীর্তন ও ঠুমরী শেখেন সঙ্গীতাচার্য ধীরেন্দ্রনাথ দেবের কাছে ;১৯৩০ সালে আনাদি দস্তিদারের কাছে রবীন্দ্র সঙ্গীতের শিক্ষা লাভ করেন এমন কি শান্তিনিকেতনে আমিতা সেনের কাছে নৃত্যচর্চাও করেন ।সঙ্গীতের সকল ক্ষেত্রে সমান পারদর্শিতা  ছিল তার। নিজেকে সমৃদ্ধ করেছেন, সম্পূর্ণ ছিল সুরের জ্ঞান ।
    ১৯৩৭ সালে  এলাহাবাদ মিউজিক কনফারেন্সে তাঁর দেখা হয় শচীন দেব বর্মনের সঙ্গে। তাঁর প্রতিভায় মুগ্ধ হন শচীন ।বিয়ে হয় ১৯৩৮ সালে । বয়েসের তাফাত ছিল অনেকটাই ।এ ছাড়া শচীন ছিলেন ত্রিপুরা রাজ পরিবার ভুক্ত । তাই আপত্তি উঠেছিল ।ঝড়  উঠেছিল দুই পরিবার থেকেই ।কিন্তু  দুজনেই ছিলেন অনড় ।তাই শুভ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছিল সাড়ম্বরে ।শচীনএসেছিলেন ঘোড়ায় চড়ে ,হাতে তারবারি । বসেছিল নহবতখানা, বাজিয়েছিলেন আলি হুশেন খাঁ ।  রাহুলের জন্ম ১৯৩৯ সালের জুন মাসে ।
    বিবাহের বছরে ই All  India Radio, kolkata থেকে অডিশন দিয়ে উত্তীর্ণ হলেন।শুরু করলেন পড়াশোনাও।আই এ পরীক্ষাই বসলেন ।কিন্তু সংগীতের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন অনেক আগেই তাই পড়াশোনায় ইতি দিয়ে সঙ্গীতের পথ ধরেই হাঁটলেন। ইতিমধ্যে শচীন দেব বর্মণ তার সঙ্গীতের অভিমুখ বম্বের দিকে নিদ্দির্ষ্ট করলেন ।আর এক নতুন অধ্যায় শুরু হল। বম্বে গিয়ে মীরা দেবী ফয়াজ মহম্মদ খানের কাছে আবার তালিম নিতে শুরু করলেন। সঙ্গীতের পিপাসা ছিল অসীম। নিজেকে সমৃদ্ধ করার প্রয়াস চলছিল নিরন্তর।১৯৪৫ সালে All India Radio,Bombay থেকে অডিশন পাশ করে ঠুংরি ও গজল পরিবেশন করতেন। BOMBAY IPTA-র সংগেও যোগাযোগ ছিল ।বম্বের সাংস্কৃতিক  জগত তখন  প্রগতিশীলতার কেন্দ্র।  সেই সময় দুটি নাটক শান্তি ও নয়া প্রভাতের  গানের কথা রচনা করেন। শচীণ দেব বর্মণের সঙ্গে অনেক গানের রেকর্ডও করেন তিনি –আজ দোল দিল কে~(১৯৪৬),তুম হ বড়ে চিতচোর ~(১৯৪৬),কেন হায় স্বপ্ন ভাঙ্গার আগে~(১৯৪৯),কালি বদরিয়া ছা গয়ে, ডালি ডালি ফুল~(১৯৪৮),কে দিল ঘুম ভাঙ্গায়ে~(১৯৪৯)।                                                          
                              Assistant Music Director হিসেবেও তার বিকাশ ছিল উজ্জ্বল। সেই সময় কজন মহিলা সঙ্গীত পরিচালিকা ছিলেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না ।  সময় থেকে সব বিষয়েই এগিয়ে ছিলেন তিনি।স্বাকিয়তা ছিল তার সব সৃষ্টির মূল কথা। নয়া জমাণা, তেরে মেরে স্বপ্নে , শর্মিলি ,অভিমান , বারুদ ,প্রেম নগর – এই বিখ্যাত চলচ্চিত্র গুলোর সহযোগী সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন তিনি। এই চলচ্চিত্র গুলোর সুরের অভিযান মুখরিত করেছিল সমস্ত শ্রোতাদের । এখনো এগুলো আমাদের কাছে স্বর্ণযুগের গান । মন গাথা সুর সে সব। কিছু কিছু গানের যেমন- ইয়ে দুনিয়া আগর মিল যায়ে তো (রফি,পেয়াসা,১৯৫৭) ,কোই আয়া ধড়কন (আশা ,লাজবন্তী , ১৯৫৮), ওয়াক্ত নে কিয়া ,(গীতা দত্ত,কাগজ কে ফুল ,১৯৫৯) ,উচে সুর মে গায়ে যা, (কিশোর,হাউস নং-৪৪,১৯৫৯),মেরে বৈরাগী ভওমরা, (লতা,ইস্ক পর যোর নেহি,১৯৭০), শুন শুন শুন মেরী (লতা,ছুপা রুস্তম,১৯৭৩)-সুরের মূর্ছনায় আবিষ্ট হয়েছিল মানুষ ।তাঁর কথায় কয়েকটি বিখ্যত বাংলা গান-আজ দোল দিল কে বীণায়, কেন আলেয়ারে বন্ধু ভাবি,বাঁশী তার হাতে দিলাম,ভঙ্গিতে ওর নেশা, বিরহ বড় ভাল লাগে,গানের কলি সুরের দুরিতে,ঘাটে লাগাইয়া ডিঙ্গা,বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতে, কালসাপ দংশে আমায় ,কে যাস রে ভাটি গাঙ্গ বাইয়া,কি করি আমি কি করি, না আমারে শশী চেয়ো না , নিটোল পায়ে রিনিক ঝিনিক, রাধার ভাবে কালা হইল, সে কি আমার দুষমন দুষমন, শোন গ দখিন হাওয়া , তাগডুম তাগডুম বাজে ।
    ১৯৭৫ সাল, স্বামীর মৃত্যু পর্যন্ত বম্বের বাড়ি  জেটে বাস  করেছেন।তারপর পুত্র রাহুলের সঙ্গে রাহুলের ভদ্রাসন মেরি ল্যান্ডে।কৃতী পুত্র রাহুল মারা গেলেন ১৯৯৪ সালে। পুত্র ও স্বামীর মৃত্যুর অসম্ভব শোক তাকে মানসিক ভারসাম্যহীনতায় পৌছে দিল। শেষের সেদিন বড় ভয়ংকর ছিল এই অসামান্য গীতিকার, সুরমালিকার ।কথায় কথায় মালা গেথেছিলেন যিনি,বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তার কথা।কেবল SD-র গান শুনলে নড়ে চড়ে উঠতেন।  চেতনার  জগত তার কাছে মুল্য হারিয়েছিল। ভাসির একটি ওল্ড এজ হোমে তার মৃত্যু হয় ২০০৭ সালের,১৫-ই অক্টোবর ।
    একজন এরকম মানুষের শেষের পরিনতি কেন ই বা এমন হয় সে এক  বিস্ময়! তার গানের অভিনব ব্যপ্তি ভরিয়ে তুলেছিল কথা ও সুরের জগত।জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শব্দ, সুর ,ব্যঞ্জনা বাঙময় হয়ে উঠেছিল তার সৃষ্টিতে।জীবনমুখী শব্দবন্ধ সেদিন ছিল না,কিন্তু লোকজীবনেরই কথকঠাকুর ছিলেন তিনি।
    বাংলাদেশ  স্বাধীন হওয়ার পর  মাতৃভূমির টানে ছুটে গিয়েছিলেন সেখানে। যখন ফিরছিলেন গ্রামের পুকুর পার দিয়ে, দেখলেন একটি চৌদ্দ –পনের বছরের মেয়ে  পুকুর পারে বসে হাপুশ নয়নে কাঁদছে ।দু চোখে তার জলের ধারা।  জিজ্ঞেস করায় মেয়েটি বলল –সদ্য বিয়ে হয়েছে, ভাই আসবে বাপের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য। সকাল থেকে অপেক্ষা করে করে ক্লান্ত সে, ভাইয়ের আর দেখা নেই। তৈরি হল মন আকুল করা কথা ‘কে যাস রে ভাটি গাঙ বাইয়া আমার ভাই ধনরে কইও নাইয়র নিত আইয়া’।এমনি ছিল  মাটি দিয়ে তার প্রতিমা গড়া।
                                              শুধু বোঝা গেল না এমন মরমী  শিল্পীর প্রাপ্তির ঘর এত শূন্য কেন? শেষের কটা দিন ই বা কেন এত কষ্টে কাটাতে  হল শব্দসম্রাজ্ঞীকে? একটি পুরস্কারও তার জন্যে বরাদ্দ হল না? আশ্চর্য নীরব চরাচর!
                                 “রইল তাহার বানী, রইল ভরা সুরে,রইবে না সে দূরে—“
                                    ~~~~~~~~~~ঃঃঃঃ~~~~~~~                              

      • Anupam Das Sharma বাঃ দারুন অজানা তথ্য। জানলাম। সংশোধন যদি সম্ভব হয়- কমলনাথ দাসগুপ্ত.... কমলনাথ দাশগুপ্ত হবে। বৈদ্যজাত ভুক্ত সুবাদে... আমার জানা।
        September 20 at 8:08pm ·
      • Nandita Bhattacharjee thnks,,,,
        September 20 at 8:09pm · · 1 person
      • Nandita Bhattacharjee ojana bole i khuje ber kora,,,,,era sob somoye prodiper niche thaken,,,shudhu alo diye jaoai kaj,,,,
        September 20 at 8:11pm · · 2 people
      • Anupam Das Sharma Sotti kotha.. Meera Deb Barman je eto Gunii chhilen ei etota prothom janlam.. Gr8 thnx to you N a n d i t a .....
        September 20 at 8:12pm ·
      • Nandita Bhattacharjee আমিও এভাবে জেনেই চমকে উঠি ও খুজতে থাকি ্‌্‌্‌্‌
        September 20 at 8:59pm · · 1 person
      • Mostak Al Mehedi সমৃদ্ধ হয়েছি । আপনার লেখাটি পড়তে পড়তে অবাক হয়েছি, মীরা বর্মনের জন্য কষ্টও পেয়েছি । বেঁচে থাকা এক ধরনের অভিমান ।
        September 20 at 11:27pm via mobile ·
      • Nandita Bhattacharjee একদম ঠিক মস্তাক ভাই্‌্‌
        September 20 at 11:2


প্রিয়মুখ অসহায়-একটি সনেট

প্রিয়মুখ অসহায়-একটি সনেট

by Nandita Bhattacharjee on Thursday, September 22, 2011 at 9:36pm
প্রিয়মুখ, আদুরে গ্রহটি হাঁটে পথ অসহায়
জন্মলগ্ন থেকে আগুন  হাতে হাত রয়
সারা শরীর ছিন্নভিন্ন টেকটনিক ভয়
ভাসমান মাটিতে ভাসে  মুখ অক্ষয়
নিরবচ্ছিন্ন অনিশ্চিত অনিকেত সময়।
আগুণের পিঠে বসে সেঁকে নেয় গ্রীবা
তরপর,তারপর ,কত  কত চলা বাঙ্ময়
অমোঘ অস্তিত্ত্ব সংকটে  ঢেকে দেয় আভা।


হঠাৎ হঠাৎ ছায়া পড়ে অভিমানী ঠোঁটে
শরীর মোচড় দেয় ঘন হয় প্রারম্ভিক মান
কম্পনে বহমান শরীর ঝটিতি দুলে ওঠে
হিমবাহ গলে যায় জলে ভরে  হ্রদের উঠান
সহ্যের সীমানায় কাঁটাতার অচিরে ফোটে
মোছা যায় না শুধু জন্ম-লগ্ন-ক্ষণ ,কপাল লিখন।

Monday 29 August 2011

হাবুর হা ঘর


                               
প্রতিমাসের দু নম্বর রবিবারে হাবু মাস কাবারি  বাজার দিয়ে যায়। জিরে পোস্ত হলুদ শস্যে সার্ফ টুথপেষ্ট ইত্যাদি । হাবুর চেহারা খুব লম্বা চওড়া ।প্রায় ৬ ফুট । স্বাস্থ্য খানা ও মন্দ নয়।  হাত পা গুলো টানটান ওমন ৬ ফুট  ছিপে ছিপে  চেহারা যে কোথা থেকে পেল! চৌকোনা  মুখ—চাপা রং ,দাতে একটু মিশি মাখানো।  বোধহয় চাপা কলের জল ব্যবহার করে। কিন্তু চোখ দুটোর মধ্যে একটা মায়াবী ছায়া খেলা করে । হাউ হাউ করে কথা বলে। যেন থামতে  জানে না । বুকের ভেতরের দরজা বন্ধ নয় কপাট  খোলা। দশ বছর  বয়েস থেকে বাড়ীর কাছে মুদির দোকানে ফাই ফরমাস খাটে । ওর বাবা ই বন্দোবস্ত করেছিলেন ।
হাবুর বাবা- সুকুমার সাহা । দর্জির কাজ করেন । দুই মেয়ে এক ছেলে । কোন রকমে সাংসার চলছে । উদ্বাস্তু হয়ে এই পাড়ায় এসে উঠেছিলেন । এই পাড়ায় সবাই ওপার  বাংলার । আয় তেমন হয় নাসুতরাং ছেলেকে দিয়ে রোজগারের চেষ্টা। হাবু কিন্তু সকলের চোখের মনি ।  ফরমাশ করার আগে ই ছোটে। চালাকি করে না ।  ফাঁকি মেরে বাজিমাত করার কোন চেষ্টা নেই। কেবল পড়াশোনা তা সে ভাবে হল না। দু বার মাধ্যমিক দিয়েছিল পাশ করতে পারেনি ।
গোবিন্দর দোকানই তার ঠিকানা । দোকান টা মোটামুটি সে ই সামলায় । সকাল সাত টা থেকে দোকানে থাকে।দুপুরে একবার দোকান বন্ধ হয় ।  আবার বিকেল পাঁচটা থেকে রাত এগারটা পর্যন্ত। এর মধ্যে আবার সকলের বাড়ীতে গিয়ে জিনিসপত্র পৌছে দেয়া । হাবুর বয়েস এখন পঁচিশ । খুব ইচ্ছে একটা দোকান খোলার।  যাদের বাড়ীতে লম্বা লম্বা পা ফেলে হাফ প্যান্ট পরে জিনিসপত্র পৌঁছে দিতে যায়  সকলকেই এই ইচ্ছের কথা প্রকাশ করে ।
দেশবন্ধুনগরের দরজিপাড়ার ছোট্ট একফালি গলির মধ্যে  দু কামরার ঘর বাবা বৃদ্ধ হয়েছেন। মা নেই। দুই দিদি ।একজনের বিয়ে হয়েছে কিন্তু ফেরত। দু সন্তান সমেত। আর এক দিদি বোঝে কম। চিকিৎসা হয়নি ।তাই শৌখিন রিটার্ডেড নাম লাগেনি   এখনও কুচি দেয়া জামা পরে। তিরিশ বছর বয়েশ। বড়দি আয়া সেন্টারে নাম লিখিয়েছে ।বার ঘণ্টা কাজ করলে একশ টাকা  পায় ।মাঝে মাঝে কাজ থাকে না ।তখন দিনে শূন্য । no work no pay.বিশ্বায়নের যুগ।আট ঘণ্টার কাজ স্বপ্ন? নিশ্চিন্দি চাকরি –সম্মান ।সব ই কেমন অচেনা লাগে ।এখনকার প্রজন্ম বার চৌদ্দ আঠার কুড়ি ঘণ্টা কাজ করে । তবুও নিশ্চিন্ত নয় ।এই গেল এই গেল ভাব। নিশ্চিন্দিপুরে নয় আশঙ্কাপুরে বাস।
যাকগে,সবাই একটু একটু সাহায্য করে পয়লা বৈশাখে দোকানের উদ্বোধন হল। ঘরের লাগোয়া বাড়ীর সামনের এক ফালি খলি জায়গায় । ইটের ওপরে ইট চাপিয়ে কোন মতে এক খাবলা সিমেন্ট দিয়ে বেশি বালি মিশিয়ে একটি ঘর খাড়া করা হল।  ঝকঝকে কাঁচের ঘেরাটোপ নয় ।উরদিপরা বকলেস লাগান ছবি সহ পরিচয় পত্র নেই।কনরকমে আট ফুট বাই পাঁচ ঘরের ঘেরা টোপ।
তখন পঁচানব্বই ছিয়ানব্বই সাল।নতুন টাউনশিপ রাজারহাট  উদ্বোধন হবে তোড়জোড় চলছে। দিকে দিকে বারতা রটে যাচ্ছে ক্রমে। ভি আই পি রোডের সমান্তরাল বেশ বড় পাকা রাস্তা  সটান টাকি রোড এ গিয়ে উঠেছে চোখের আড়ালে থাকা দুয়োরানী রাস্তাটির কদর বেড়ে গেল। দৃষ্টির আড়ালে থাকা  অঞ্চল নতুন কলকাতা হবে। রাতারাতি বেড়ে গেল জমির দাম। যাদের একটু বেশি জমি ছিল চার কাঠা পাঁচ কাঠা বা তার বেশি তারা রাতারাতি রাজা হয়ে গেলপ্রমোটারের বদান্যতায় পেটে বিদ্যে না থাকলেও জমির দৌলতে বাড়ীতে আধুনিক গেজেট বসল ।-চুন সুরকির ব্যবসা হল।  পালে পালে ওনারশিপ ফ্ল্যাট গড়ে উঠলো গুটি গুটি পরিযায়ী পাখির মত লোক আসতে লাগল । পাড়ার লোকেরাই যেন বাইরের লোক হয়ে উঠল । সাতচল্লিশ সালের পর দলে দলে ছিন্নমুল মানুষের ঢল নেমে জায়গাটি বর্ধিষ্ণু হয়েছিল ।এপারের বাগুইদের সঙ্গে ওপারের সাহাদের সুন্দর সহাবস্থান তৈরি হল।এখন আবার আগরয়াল ,ঝুনঝুনওয়ালাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা। সাদরে গ্রহন করল তারা। যেন পাড়ার অতিথি।
--‘যা চাই বলবেন দিদি ‘হাবুর উচ্ছাস ভরা মুখ।
হাবুর দোকান বেশ ভালই চলছিল।তাক ভরতি হল  মশলাপাতি বিস্কুট সাবান তেল সস পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে আবার সেক্টর ফাইভ এর বিশাল অঙ্কের চাকুরিয়ানরাও রয়েছেন। সুতরাং তাদের জন্য কিছু বিশেষ বিশেষ জিনিস রাখতে হয়। ঝুলতে লাগল রেডি  আদাবাটা রশুনবাটা আচার  কর্নফ্লেক্স চিপস বিভিন্ন রকম শ্যাম্পুর স্যসে আরও কত কি বাহারে জিনিস আমরা সচেতন ভাবে  ওর দোকান থেকেই জিনিস কিনতাম।
আমরা যারা ওকে একটু বিশেষ স্নেহের চোখে দেখি দোকান খোলার দিন গেলাম। মনে হল এ পোড়া জীবনে যা হোক একটা বেশ কিছু করা গেল। খুব এক খানা আত্মতৃপ্তি হল   হাবু আগে যে দোকানে কাজ করত সেটাকে আমরা বুড়োর দোকান বলতাম। সেখানে আমরা আর যাচ্ছি না  হাবুর দোকান থেকেই সব জিনিস কেনা হয়। বেশ চলছিল। হাবু বিয়ে করেছে। দু কামরার ঘর তিন কামরা হয়েছে। একটি বাচ্চা ও হয়েছে।  সে ও খুশ আমরা ও খুশ।
কিন্তু জীবন কি সবার জন্যে সোজা পথে হাটে? হাবুদের বেলায় নয় বোধহয়। হঠাৎ খবর পাওয়া গেল ফিগবাজার  খোলা হবে—আশিহাজার স্কোয়ারফিট দুনিয়াদারির সব কিছু এক ছাদের তলায় খাওয়াদাওয়া, গয়নাগাটি, কাপড় চোপড়,  বাসন কোসন, হরেক মাল। ঠাণ্ডা ঘরের কাঁচের দরজার ভেতরে দোকান থুড়ি রিটেল  স্টোর খোলার প্রথম দিন কাছাকাছি গ্রাম থেকে আসা মানুষ এমন  ভাবে হামলে পড়ল যে কাচের দরজা ভেঙ্গে চৌচির ! আশে পাশের মানুষগুলো ত এমন বৈভব দেখেনি! একসঙ্গে এত জিনিস কি এরা কখন দেখেছে? হারেকমাল  অনেকদাম।
হাবুর দোকানে যারা হাজার বারশ টাকার বাজার করতেন তারা হারেকমাল মনোহারিণী দোকানের ঠাণ্ডা ঘরে ছুটলেন।বিকেলে অফিস থেকে ফিরে ধোপ দুরস্ত হয়ে পারফিউম সহযোগে পরিবার সহ  ভ্রমন। আহা কি সুখ! গরমের বালাই নেই।ঝলমলে দোকানে ঢোকার মুখে উর্দিপরা দরওয়ানের মুখে ‘ওয়েলকাম’যেন মধু বর্ষন হল।  একেবারে রাতের খাওয়া সেরে ফেরা।
মুখ শুকাতে শুরু করল বাবুর। প্রথম কিছুদিন ব্যাপারটা বুঝতে পারেনি। শুধু দেখল ওর আয় ক্রমশ কমছে। আমরা কজন বাঙালি জাতীয়তাবোধে ও হাবুর প্রতি মায়ায়  ওর দোকানের ভরসা  তে রইলাম। বা ও আমাদের ভরসায় রইল।   
তারপর এল মিশাল মার্কেট –কালিকট বাজার- মিত্রা বাজার- মিটিমিটি সেন্টার । হাবু প্রমাদ গুনল। অথ কিম? প্রতিমাসে বাজার পৌছে দিতে এসে হাত পা ছড়িয়ে বসে আশঙ্কার কথা জানায়। আমরা আতঙ্কিত হই।
--‘কি রে সংসার চলছে ত ?দোকান ঠিক মতো চালাতে পারছিস তো ?দোকানের মাল পত্র আনার মত টাকা আছে তো?’ হু হা জবাব তার। চোখের তলায় কালি। বাজার জগত কে রোখার ক্ষমতা ওর নেই।
বেশ কিছুদিন হল হাবু আর মালপত্র দিয়ে যাচ্ছে না। রোজ দিন ই হাবুর কথা ভাবি। কোন খবর পাচ্ছি না ওর।অনেক ব্যস্ততার মধ্যে  কত আর মনে থাকে ?কিছুদিন পর শুনলাম হাবুর দোকান যা ভেবেছিলাম তাই,  বিক্রি হয়ে গেল। দোকান কিনল দানী সিং –বিহারের লোক।  খুব অমায়িক  রোজ সকালে  চুনসুরকি বাড়ীর লাগোয়া নবনির্মিত শিব মন্দির পুজো দেয়। লালটিকা,  চন্দন , শোভিত কপালে  দোকান খোলেদেখা হলেই আকর্ণ হাসি।–‘দিদি হামার দোকানে আসবেন।‘আসব তো বটেই ,দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে বলি।
হাবু এখন রিক্সা চালায় ।এ রকম আধা মফস্বলি পাড়ায় এখনও মারসেডিস রিক্সা কে হারাতে পারেনি।তাই রক্ষে। হাবুর জীবন চলবে  খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়েএকবার উঠে  দাঁড়াবে , হামাগুড়ি দেবে, তারপর মুখ থুবড়ে পরবে।
                      ~~~~~~~~্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌~~~~~~~~