by Nandita Bhattacharjee on Monday, October 3, 2011 at 10:13pm
ষষ্ঠীর সন্ধ্যে থেকেই মায়ের মন খারাপ,বলেন নি কিছুই তবুও যেন চোখের দিকে তাকালে ,গালের ভাঁজের কাপনে , সন্ধ্যেতে আনমনা হয়ে বসে থাকা সবই যেন মুখর হয় মায়ের আজ মন কোথায় আনমনা হয়েছে ।তক্ষুনি দাদার ফোন এল ,"বিল্বষষ্ঠী করছ ,কাকিমা,আমাদের সব কেমন ছন্নছাড়া হয়ে গেল'যে জলটুকু সারাদিন চেষ্টা করে ধরে রাখা ছিল তা গড়িয়ে পড়ল বললেন ,'হ্যাঁ ,মনে মনে করছি। এই তো উঠোনে বেল গাছের ডাল পোতা হয়েছে ।আমরা ছ 'জন জা ঘিরে বসেছি ।'আর কিছু বলা হল না ।
বাড়ীতে পুজো হত । পুজো থেকেও বেশি সারা পরিবারের মিলন মেলা ।সেখানে ধর্ম কতটুকু ছিল জানিনা। তাবে প্রবাসে থাকা বাড়ির ছেলেটি আসবে, মেয়েরা আসবে শশুরবাড়ি থেকে, পিসিরা আসবেন । সকলে এলেই ছুটে ছুটে বেরনো ,সে সকাল ,বা রাত দুপুরই হোক ।তারপর তো হই হই ।সকলের তদারকি। দিদিদের ফাই ফরমাশ খাটা ।বোনপো বোনঝি আমাদের জিম্মায়। মায়েরা সারাক্ষন রান্নাঘরে ,আর আমাদের কপালে বকুনি।জাঁদরেল জ্যেঠামশাই চুন থেকে পান খসলেই শব্দবান । বাবা তটস্থ । বেশ মজা লাগত ।দাদারাও ভয়ে কাঁটা ।
বাড়িতে মূর্তি তৈরি হত। পুন্যদার সঙ্গে থাকতে হত ।পুন্য পাল বাড়ির পাশেই থাকত ।এটা দাও,ওটা দাও ।পুরান কাপড় দাও,তাতে মাটি লেপ দিয়ে কাঠামোর গায়ে আটকে দেয়া যাতে করে মাটি না ফাটে । দেখতাম কি নিমগ্ন ভাবে খড় বাঁশের কাঠামো থেকে আস্তে আস্তে মাটি দেয়া,একটু একটু করে গোড়ে তোলা একটি অবয়ব ,শেষে ষষ্ঠীর দিন চক্ষুদানে গিয়ে শেষ হত। পুন্যদাকে মনে হত জাদুকর। একটু একটু করে মানস প্রতিমা রূপ দেয়া।
ষষ্ঠীর দিন বিকেলে ঠাকুমা সকলের জন্য কেনা নতুন কাপড়ের ট্রাঙ্ক নিয়ে বসতেন।একে একে বড় থেকে ছোট সকলে যার যার প্রাপ্য জামা কাপড় নিয়ে যেতেন । মায়েদের সকলের একই দামের শাড়ী। বাচ্চাদের,ভাইদের একই রকম ব্যবস্থা। ভীষন রকম সাম্যবাদ মানা হত। বড়লোক বাপের মেয়ে বা ছেলে হলেই দামী জামা কাপড় পাবে সেটি হবার জো ছিল ন।
সপ্তমীর সকাল শুরু হত বাড়ির ছোট ছেলেদের ঘুম থেকে তুলে ফুল তুলতে পাঠান দিয়ে । ভোর চারটেতে উঠতে হতো। সকালের আলো ফুটতেই ফুলের বোঝা নিয়ে সবাই ফিরল । ডালায় সবরকমের ফুল। এবার এগুলোকে গুছিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের ,মেয়েদের।সাজিয়ে রাখা ভাগ ভাগ করে ।তারপর মালা গাথা।তিরিশ চল্লিশখানা মালা গাথতে হত। এর মধ্যে সকলে যে যার মত বিভিন্ন রকমের কাজ খুঁজে নিত।কারোকে বলতে হত না । এক অদ্ভুত শৃঙ্খলা ।দুর্গাঘরের কাজ বড়দের তদারকিতে হত।
বাড়ির বা বাইরে থেকে আসা বয়স্ক মহিলারা গীত গাইতে বসে যেতেন । একেবারে দুর্গার আগমন, জাগানি, বিল্ববরন প্রতিটি পর্যায়ের গান । মধ্যে মধ্যে অঞ্জলি ইত্যাদি নিয়ম কানুন চলছে । দুপুরের পরিবেশনের দায়িত্ব পড়ত ছেলেদের ওপর ।তার মধ্যে আত্মীয় স্বজনদের আসা যাওয়া খুনসুটি । যারা হয়ত সারা বছরে আসতে পারতেন না তারাও একবার ঢুঁ মেরে যেতেন । এই পুজোর সুবাদে অনেকের সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়া ,অনেকের সঙ্গে নতুন করে পরিচয় হওয়া ।এমনকি দু চারটে বিয়ের সম্বন্ধ ,পাত্রি দেখাও ঘটে যেত । বাড়িতেই সব বয়েসের সঙ্গি জুটে যেত ।তাই জায়গায় জায়গায় আড্ডা জমত সন্ধ্যের পর। দেখা যেত গোল গোল হয়ে এক এক ঘরে এক দল সমবয়স্কদের মজলিশ চলছে। যদিও মা ,জ্যেঠিমা ,কাকিমারা সেই রাত বারটায় রান্না ঘর থেকে ছুটি পেতেন। তাদের আড্ডাখানা ছিল রান্নাঘর ।কি আনন্দ, হাসি ,কলরব। হাতে হাতে কাজ করে যাওয়া ।কোন ক্ষোভ নেই , আক্ষেপ নেই, অনাবিল আনন্দ, মাহামিলন ঘটেছে । তিন দিন ধরে এই নিরলস কর্মকাণ্ড চলেছে ।
দশমীর দিন এল।যেন বাড়ির মেয়েটি পিত্রালয় থেকে শ্বশুরঘর যাবে । মায়েরা এই তিনদিন নতুন কাপড় পরার সময় পাননি ।সেদিন পরলেন ।মেয়েকে যাত্রা করালেন চোখের জলে । মায়ের ঘর শূন্য মেয়ের যাত্রা । ট্রাকে তোলা হল প্রতিমাকে ।জ্যেঠামনি সুর ধরলেন,
মারে ভাসাইয়া জলে
কি ধন লইয়া যাইমু ঘরে
ঘরে গিয়া মা বলিব
কারে গো ,ও মা ।
হিমালয়ের যত নারী
তারা কান্দে গৌরি গৌরি
কান্দিয়া কান্দিয়া
ধরণী লুটায় গো ,ও মা।
তাই মা আজ ভাঙ্গা যৌথপরিবারের স্মৃতিচারনায় চোখ ভাসান ।খুঁজে বেড়ান মাহামিলনের সোপানগুলো । সোনাঝরা দিনগুলোয় ঝাপ দিয়ে খোঁজেন চেনা মুখ । আর বিড়ম্বিত হয় ষষ্ঠীর বিকেল।
ঃঃঃঃঃঃঃ
বাড়ীতে পুজো হত । পুজো থেকেও বেশি সারা পরিবারের মিলন মেলা ।সেখানে ধর্ম কতটুকু ছিল জানিনা। তাবে প্রবাসে থাকা বাড়ির ছেলেটি আসবে, মেয়েরা আসবে শশুরবাড়ি থেকে, পিসিরা আসবেন । সকলে এলেই ছুটে ছুটে বেরনো ,সে সকাল ,বা রাত দুপুরই হোক ।তারপর তো হই হই ।সকলের তদারকি। দিদিদের ফাই ফরমাশ খাটা ।বোনপো বোনঝি আমাদের জিম্মায়। মায়েরা সারাক্ষন রান্নাঘরে ,আর আমাদের কপালে বকুনি।জাঁদরেল জ্যেঠামশাই চুন থেকে পান খসলেই শব্দবান । বাবা তটস্থ । বেশ মজা লাগত ।দাদারাও ভয়ে কাঁটা ।
বাড়িতে মূর্তি তৈরি হত। পুন্যদার সঙ্গে থাকতে হত ।পুন্য পাল বাড়ির পাশেই থাকত ।এটা দাও,ওটা দাও ।পুরান কাপড় দাও,তাতে মাটি লেপ দিয়ে কাঠামোর গায়ে আটকে দেয়া যাতে করে মাটি না ফাটে । দেখতাম কি নিমগ্ন ভাবে খড় বাঁশের কাঠামো থেকে আস্তে আস্তে মাটি দেয়া,একটু একটু করে গোড়ে তোলা একটি অবয়ব ,শেষে ষষ্ঠীর দিন চক্ষুদানে গিয়ে শেষ হত। পুন্যদাকে মনে হত জাদুকর। একটু একটু করে মানস প্রতিমা রূপ দেয়া।
ষষ্ঠীর দিন বিকেলে ঠাকুমা সকলের জন্য কেনা নতুন কাপড়ের ট্রাঙ্ক নিয়ে বসতেন।একে একে বড় থেকে ছোট সকলে যার যার প্রাপ্য জামা কাপড় নিয়ে যেতেন । মায়েদের সকলের একই দামের শাড়ী। বাচ্চাদের,ভাইদের একই রকম ব্যবস্থা। ভীষন রকম সাম্যবাদ মানা হত। বড়লোক বাপের মেয়ে বা ছেলে হলেই দামী জামা কাপড় পাবে সেটি হবার জো ছিল ন।
সপ্তমীর সকাল শুরু হত বাড়ির ছোট ছেলেদের ঘুম থেকে তুলে ফুল তুলতে পাঠান দিয়ে । ভোর চারটেতে উঠতে হতো। সকালের আলো ফুটতেই ফুলের বোঝা নিয়ে সবাই ফিরল । ডালায় সবরকমের ফুল। এবার এগুলোকে গুছিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের ,মেয়েদের।সাজিয়ে রাখা ভাগ ভাগ করে ।তারপর মালা গাথা।তিরিশ চল্লিশখানা মালা গাথতে হত। এর মধ্যে সকলে যে যার মত বিভিন্ন রকমের কাজ খুঁজে নিত।কারোকে বলতে হত না । এক অদ্ভুত শৃঙ্খলা ।দুর্গাঘরের কাজ বড়দের তদারকিতে হত।
বাড়ির বা বাইরে থেকে আসা বয়স্ক মহিলারা গীত গাইতে বসে যেতেন । একেবারে দুর্গার আগমন, জাগানি, বিল্ববরন প্রতিটি পর্যায়ের গান । মধ্যে মধ্যে অঞ্জলি ইত্যাদি নিয়ম কানুন চলছে । দুপুরের পরিবেশনের দায়িত্ব পড়ত ছেলেদের ওপর ।তার মধ্যে আত্মীয় স্বজনদের আসা যাওয়া খুনসুটি । যারা হয়ত সারা বছরে আসতে পারতেন না তারাও একবার ঢুঁ মেরে যেতেন । এই পুজোর সুবাদে অনেকের সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়া ,অনেকের সঙ্গে নতুন করে পরিচয় হওয়া ।এমনকি দু চারটে বিয়ের সম্বন্ধ ,পাত্রি দেখাও ঘটে যেত । বাড়িতেই সব বয়েসের সঙ্গি জুটে যেত ।তাই জায়গায় জায়গায় আড্ডা জমত সন্ধ্যের পর। দেখা যেত গোল গোল হয়ে এক এক ঘরে এক দল সমবয়স্কদের মজলিশ চলছে। যদিও মা ,জ্যেঠিমা ,কাকিমারা সেই রাত বারটায় রান্না ঘর থেকে ছুটি পেতেন। তাদের আড্ডাখানা ছিল রান্নাঘর ।কি আনন্দ, হাসি ,কলরব। হাতে হাতে কাজ করে যাওয়া ।কোন ক্ষোভ নেই , আক্ষেপ নেই, অনাবিল আনন্দ, মাহামিলন ঘটেছে । তিন দিন ধরে এই নিরলস কর্মকাণ্ড চলেছে ।
দশমীর দিন এল।যেন বাড়ির মেয়েটি পিত্রালয় থেকে শ্বশুরঘর যাবে । মায়েরা এই তিনদিন নতুন কাপড় পরার সময় পাননি ।সেদিন পরলেন ।মেয়েকে যাত্রা করালেন চোখের জলে । মায়ের ঘর শূন্য মেয়ের যাত্রা । ট্রাকে তোলা হল প্রতিমাকে ।জ্যেঠামনি সুর ধরলেন,
মারে ভাসাইয়া জলে
কি ধন লইয়া যাইমু ঘরে
ঘরে গিয়া মা বলিব
কারে গো ,ও মা ।
হিমালয়ের যত নারী
তারা কান্দে গৌরি গৌরি
কান্দিয়া কান্দিয়া
ধরণী লুটায় গো ,ও মা।
তাই মা আজ ভাঙ্গা যৌথপরিবারের স্মৃতিচারনায় চোখ ভাসান ।খুঁজে বেড়ান মাহামিলনের সোপানগুলো । সোনাঝরা দিনগুলোয় ঝাপ দিয়ে খোঁজেন চেনা মুখ । আর বিড়ম্বিত হয় ষষ্ঠীর বিকেল।
ঃঃঃঃঃঃঃ
No comments:
Post a Comment