Wednesday 24 August 2011

ছেলেবেলা~~কোথায় গেলা?

by Nandita Bhattacharjee on Thursday, June 23, 2011 at 11:22pm

আমাদের ছিল কাপড়ের পুতুল -নিজে বানাতাম। পুতুল বানানোর কায়দাটিও ছিল মজার।চারকোনা পুরণো নরম ধুতির টুকরো ,মাথাটি তুলো দিয়ে সুতো দিয়ে বেঁধে গোল করে নেয়া হতো। ঝ্যাটার কাঠি ভেঙ্গে কাপড় পেঁচিয়ে তৈরী হত হাত। এরপর সেই কাঠি হাত গলার সঙ্গে সুতো দিয়ে জোর জুড়ে দেয়া। এবার চুল। কাল ক্রসেটের এক গুচ্ছ সুতো কেটে অথবা মায়ের ট্যাসেল কেটে তার থেকে যতটা প্রয়োজন সেলাই করে জুড়ে দিতাম। এলো চোখ মুখের পালা । কাল সুতো দিয়ে চোখ ভুরু নাক,ঠোঁট ও টিপ লাল সুতো দিয়ে । হাতে ও গলায় ছোট ছোট পুঁতি দিয়ে মালার ও চুড়ি। কত চারুকলা। তারপর পাশের বাড়ীর বড়পিসীর কা...ছে ছুট্টে গিয়ে শাড়ী জামা বানাবার জন্যে টুকরো কাপড় চেয়ে আনতাম।বড়পিসী সেলাইয়ের কাজ করতেন তাই তার কাছে অনেক ছিট কাপড় থাকত।খুব সংগ্রামী জীবন ছিল তার।আমরা কোন কিছু চাইলে খুব খুশী হতেন।বড়পিসীর মেয়ে খুকুদির খুব অসুখ করেছিল,হাসপতালে ভর্তি। পাড়ার সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ল। মা গিয়ে রাতে থাকতেন হাসপাতালে। স্বামী পরিত্যক্তা বড়পিসীর গায়ে আঁচ লাগতে দিল না কেউ। খুকুদি সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরল।এমনই ছিল মধুর সম্পর্ক।

এল শীতের দিনে উল কাটা নিয়ে বসে যেতাম পুতুলের সুয়েটার বানাতে।তারপর মেলা থেকে ছোট খাট কিনে এনে বালিস তোষক সব নিজের হাতে বানানো চলত।সব সুঁচ সুতো নিয়ে হাতে সেলাই ।তরপর এল সেই পরম লগন পুতুলের বিয়ে।বন্ধু মালার ছেলে আমার মেয়ে।বড়পিসীর কাছ থেকে বায়না করে বেনারসীর টুকরো যোগাড় করে ফেল্লাম।চুমকী দিয়ে ব্লাউস ওড়না তৈরী হল। পাতাবাহারের পাতা দিয়ে কুঞ্জ তৈরী হল।মা জ্যেঠিমারা লুচি বানালেন।কি সমারোহ।১০ মত বন্ধুর নেমতন্ন।তারপর তো চোখের জলে কনে বিদায়।তখন হঠাৎ মনে হল আরে এ সব ই তো বন্ধুর বাড়ী চলে যাবে।পরদিন গিয়ে কোন এক ফাঁকে পাত্র পাত্রী দুজনকে চুরি করে নিয়ে পালিয়ে আসা।বন্ধু মালা কি আর ছেড়ে দেয়?পনসামগ্রী ওপাত্র পাত্রীর দাবী নিয়ে কদিন চলে রাম রাবনের যুদ্ধ-তারপর আবার বর ও কনে যার যার মা বাবার কাছে ফেরত।

আর একটি ভাল লাগার পর্ব ছিল রান্না বাটি খেলা। মেলা থেকে আসত ছোট ছোট হাড়ি কুরি। উঠোনের কোন এক কোনা য়ক গর্ত খুড়ে তৈরি হত উনুন । তারপর মুলতই পাতালতা দিয়ে সব রান্নার সরঞ্জাম ব্যঞ্জন বানান। অনেক সময় সত্যি সত্যি আগুন জ্বেলে অল্প জলে রান্না ও হত। এক একটি রান্নার জন্য এক রকম পাতা। কোনটি নাম জানা কোনটি অজানা ।

মহা আনন্দের ব্যপার ছিল স্কুল থেকে ফিরে এসে খেলতে যাওয়া ।আমরা বলতাম দাড়িয়া বান্দা খেলা। কোনমতে মুখে ভাত গুজে দৌড় মাঠে। মুখার্জী জেঠুদের মাঠ সবার মাঠ।আমার মাঠে আমিই খেলব সেই মনভাব তখনও তৈরি হয়নি। ছেলে মেয়ে মিলে খেলা। মাঝে মাঝে ঝগড়া আবধারিত। তখন আবার ছেলের দল মেয়ের দল আলাদা ।শুরু হত মেয়েলি খেলা- বুড়ি কুত কুত । শীতের দিনে ব্যাডমিন্টন । কারোকে বলে দিতে হত না ।একটার পর একটা পর পর তৈরি।মাঝে মাঝে খেলতে খেলতে হুঁশ থাকতো না ।সন্ধ্যে পেরিয়ে গেলে জুটত উত্তম মধ্যম ।সন্ধ্যে ছিল একটি লক্ষন রেখা। সেটি পেরিয়ে যাওয়া মানে ই -হয়ে গেল। তবে খেলার জন্য সে টুকু আর কিছু মনে হত না। অন্ধকারে ছোড়দা ও আমাকে ঘর থেকে বের করে দিলেন বাবা। ছোড়দাও আমার খেলার সঙ্গী।সুতরাং মারের ও সঙ্গী। কিছুক্ষন পর ঠাকুমা গিয়ে চুপি চুপি ভেতরে নিয়ে এলেন।বললেন,"বাবার কথা শুনবে"।হয়ে গেল শাসন। ঠাকুমার মুখের ওপরে বাবা কিছু বলবেন না জানি। সুতরাং আমাদের পায় কে।খেলার খেলা হল বকুনি থেকে বাঁচলাম।

আর আমরা অপেক্ষা করতাম বিহুর জন্য। কারন সেদিন কলার পাছালি ও বাঁশ দিয়ে ঘর তৈরি করে হত পিকনিক। সবচেয়ে মজা হত সেদিন পেঁয়াজ খাওয়া যাবে । বাড়ীতে পেঁয়াজ রশুন বারণ । সুতরাং সেই অমৃতের স্বাদ সেদিন পাওয়া যাবে।ভাবলে এখন হাসি পায়। নগদ টাকা পয়সার কোন ব্যপার নেই। চাল ডাল,ডিম-যা দরকার সবই চেয়ে চিন্তে সবার বড়ী থেকে যোগাড় হত।সাররাত সেখান থাকা ।তবে এতোটা হত না।রাত ১২টা নাগাত ঘরে ফেরা । পরদিন ভোর বেলা চান করে ঘর জ্বালিয়ে দেয়া হত। সেখানে দাড়িয়ে আগুন পোহানো ।মা- জ্যেঠিমা -কাকিমারা রাত জেগে পিঠে বানাতেন ।কারন সেটা ছিল পৌষ সক্রান্তির আগের রাত। পরদিন ছিল মহা খাওয়ার ধুম।

এভাবে ই টিভি, কম্পিউটার গেম ,ফাস্ট ফুড, শপিং মল বিহনে আমাদের জীবন ছিল।

আজকালকার বাচ্চারা কোথায় আর এত সময় পায়।ইদুর দৌড় , কোচিং ,হ্যেনা শেখা, ত্যানা শেখা ,তারপর চাঁদ ধরার প্রতিযোগিতা। টুং সোনাদা ঘুম -এর দেশ থেকে অনেক দু--র। কষ্ট পাই ওদের জন্য।ব্যবধান টা বড় বেশি হয়ে গেছে। ছুঁতে পারিনা ওদের!!

· · Share · Delete

    • Rajesh Datta দারুণ! শৈশবের স্মৃতি ফিরিয়ে দিলেন। আমার ছেলেবেলায় বান্ধবীর সংখ্যা বেশি ছিল। তাই "ছেলেরা পুতুল খেলে না", বা "পুতুলের বিয়ে দেয় না" এমন কোনো কথা কেউ বলেনি। আমরা মনের আনন্দে পুতুল বানাতাম, পুতুলের বিয়ে দিতাম। আমার সেই হারিয়ে যাওয়া বান্ধবী খুকুন, শম্পাদের খুব মিস করি।
      June 24 at 12:53am · · 1 personLoading...
    • Nandita Bhattacharjee সত্যি আজ অনেকদিন পর লিখতে বসে সব কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।আসলে আজকাল বাচ্চাদের তো ফুরসত মেলে না।এমন যুদ্ধে আমরা ওদের ঠেলে দিয়েছি।
      June 24 at 12:58am · · 2 peopleLoading...
    • Abhijit Lahiri
      কষ্ট হয়, ওদের শৈশব আমরা কেড়ে নিয়েছি। ওদের রান্নাবাটি নেই, পুতুল খেলা নেই, ঠাকুরমার ঝুলি নেই, টুনটনির গল্প নেই, রাক্কোস-খোক্কোস নেই, অরুণ-বরুণ-কিরণমালা নেই, সুয়ো রাণি/দুয়ো রাণি নেই, সাত সাগর তের নদী, সোনার কাঠি-রুপোর কাঠি নেই, কল্পনার জগতে হ......ারিয়ে যাওয়া নেই। আছে, মায়ের হাত ধরে আঁকার ক্লাশ, সাঁতার শেখার ক্লাশ, টিভি, কার্টুন-নেটওয়ার্ক আর আর আছে জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য ইঁদুর দৌড়। ওদের জীবন থেকে কল্পনাশক্তি কেড়ে নিয়েছি আমরা। একটা মানবিক অনুভূতিহীন, কল্পনাশক্তিরোহিত সমাজ তৈরির পেছনে কে ? আমরা কি দ্বায়িত্ব এড়াতে পারি?See More
      June 24 at 2:12am · · 3 peopleLoading...
    • Abhijit Lahiri
      মনে পড়ছে কবি স্বর্ণালী বিশ্বাসের (অধুনা বিশ্বাস ভট্টাচার্য) একটি কবিতা, কবিতাটির নাম 'স্কুল' [সূত্রঃ জলসখি(১৯৯৪)] ঃ

      আমাকে চোখ রাঙাবেন না মাস্টারমশাই,
      অঙ্ক আমার শেখা হবে না।
      আমার বয়স যখন বারো হবার কথা
      ...তখন ষোল, যখন ষোল হবার কথা
      তখন ত্রিশ বা বত্রিশ।
      এখন আর সে সবের হিসেবও রাখি না,
      দোহাই, অঙ্ক করতে বলবেন না।
      এরপরও যদি বেত তোলেন হাতে
      আমি ছিঁড়ে ফেলবো খাতা
      ভেঙে ফেলবো পাঠশালা,
      দেখবেন না-মেলা অঙ্কের
      ভগ্নাংশের মতো ঝুলছে
      আপনার স্কু্ল
      আর ছাত্ররা প্রজাপতি খুঁজতে গিয়ে
      অরণ্যে হারিয়ে গেছে।
      See More
      June 24 at 2:40am · · 2 peopleLoading...
    • Rajesh Datta
      ‎"শুনতে কি চাও তুমি সেই অদ্ভুত বেসুরো সুর
      ফিরে পেতে চাও কি সেই আনচান করা দুপুর
      দেখতে কি চাও তুমি সেই খেলনাওলাটাকে
      তার খেলনা দোতারা সে বাজাচ্ছে কবে থেকে

      ...স্কুলের টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে কেনা
      সেই অদ্ভুত ফাটাবাঁশ আর মাটির সুর টানা টানা
      দু'দিনের সম্পদ দু'টাকার বাজনার বিস্ময়
      তারপর কখন হঠাৎ সুখের মানে পাল্টে যায়...
      See More
      June 24 at 11:06am ·
    • Rajesh Datta
      ‎"এখন মাসের শেষে মাঝে মধ্যে কান্না পায়
      মিনিবাসে দাঁড়িয়ে অফিস যাওয়ার সময়
      এখন বুঝেছি সেই অদ্ভুত সুরের কী মানে
      ফিরে তো যাওয়া যায়না যে আর সেখানে

      ...যেতে হবে যে তোমাকে আমাকে চলে
      লুকোনো টেক্কা সংসারের এক্কাদোক্কা ফেলে
      প্রথমে যাবে ঘরদোর দোকানপাট তারপর হৃদয়
      কিছুই হলোনা বাঁচানো গেলোনা সময়

      ইদানিং সে সুরটা শুনতে যে খুব ইচ্ছে হয়
      কিন্তু সে খেলনাওলা আর আসেনা পাড়ায়
      হয়তো কোন অন্য অলিগলি ঘুরে
      অন্য কোন কাউকে টানছে সে অদ্ভুত সুরে
      অন্য কোন কাউকে টানছে সে অদ্ভুত সুরে"--- অঞ্জন দত্ত
      See More
      June 24 at 11:08am · · 1 personLoading...
    • Nandita Bhattacharjee darun sundor rajesh thnks.
      June 24 at 6:30pm · · 1 personLoading...
    • Rajesh Datta my pleasure. Regards.
      June 25 at 12:41am ·
    • স্মৃতিলেখা চক্রবর্ত্তী Amar putul amar baba fele diyechhilo.. Bolechhilo- ami naki boro hoye gechhi!!! :-(
      June 28 at 4:24pm · · 1 personLoading...
    • Nandita Bhattacharjee sad sad sad.very bad!!
      June 28 at 4:30pm · · 2 peopleLoading...
    • স্মৃতিলেখা চক্রবর্ত্তী Nandita di: Botei to.. Botei to...
      June 28 at 4:40pm · · 2 peopleLoading...
    • Rajesh Datta
      ‎"Robbar keno jaay taratari furiye?
      Bayos ta keno jaay ratarati buriye?
      Sondhye ta keno hoy bikel ta goriye?
      Vallage na, Chhai! Vaallage na!

      ...Fele Asa dingulo aase na fire,
      Kato smriti muchhe jaay kajer vire,
      Chena Chena Katomukh hoy achena--
      Vallage na, Chhai! Vaallage na!

      Hariyechhe Rong-tuli, Drawing khata,
      Boi-er vaaje rakha Asoth pata.
      Haralo Shoishober Sonadana,
      Fire to pabo naa aar
      Vallage Na!"
      @ Nandita di, Anekdin aage amar lekha ekta gaaner du char koli mone pore gelo.
      See More
      June 28 at 9:12pm ·
    • Nandita Bhattacharjee ki je bhalo laglo bojhate parbo na ~
      June 28 at 9:51pm · · 1 personLoading...
    • Rajesh Datta Anek dhanyobad didi, puro gaanta dekhi apnake type kore porabo.
      June 28 at 9:52pm ·

No comments:

Post a Comment